মোবাইলে ফটো এডিটিং এর জন্য একাধিক অ্যাপ রয়েছে। কিন্তু আপনার জন্য বেস্ট অ্যাপ কোনটি হবে?
প্রতিটি ছবি এডিটিং অ্যাপ এর মধ্যে কিছু বিশেষ গুণ রয়েছে। আমার জন্য যে অ্যাপটি বেস্ট, আপনার জন্য হয়তো বেকার। সুতরাং সেরা অ্যাপ তাকে বলা যায়, যা আপনার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম।
আপনি কি কাজের জন্য ফটো এডিটর খুঁজছেন ?
এই আর্টিকেলে ফোনের জন্য [ ৭ টি ] বেস্ট ছবি এডিটরের উল্লেখ করা হয়েছে। এই অ্যাপ গুলি দ্বারা আপনি লোগো ডিজাইন, ফটো রিটাচ, ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করে পরিবর্তন ও আরো অনেক কিছু করতে পারবেন।
যদি সব দিক থেকেই ভালো অনেকটা ফটোশপের মত অ্যাপের কথা জিজ্ঞাসা করেন, তবে বলবো পিকস আর্ট। PicsArt এর মাধ্যমে গ্রাফিক্স, ফটো এডিটিং, ফটো ম্যানুপুলেশনের মত প্রায় অনেক কিছুই করা যেতে পারে। তাই আমাদের লিস্টে সর্বপ্রথমে রাখা হয়েছে।
তবে এই লিস্ট দেখার আগে আপনার জানা উচিত একটি ভালো ছবি এডিটিং অ্যাপ এর মধ্যে কি কি থাকা উচিত?
বিষয়সূচী
ফটো এডিটিং সফটওয়্যারের 5 টি সাধারণ গুণ
কিছু সাধারণ গুণ যা প্রতিটি ছবি এডিটিং অ্যাপে থাকা উচিত। তাই কোনো নতুন অ্যাপ ইন্সটল করার আগে এই চেকলিস্টটি দেখে নিবেনঃ
- অ্যাপ ইন্টারফেসঃ যাতে আপনি খুব সহজে এডিটিং করতে পারেন তার জন্য অ্যাপের ইন্টারফেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইনস্টল করার আগে প্লে স্টোরে থাকা স্ক্রিনশট গুলো দেখে নেবেন।
- সাধারণ এডিটিং টুলসঃ একটি ফটো এডিটরে ক্রপ (Crop), ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন এডজাস্টমেন্ট এর মত প্রয়োজনীয় অপশন অবশ্যই থাকা উচিত।
- ফিল্টার ও ইফেক্টঃ ফিল্টারের দ্বারা মাত্র একটি ক্লিকে সম্পূর্ণ ছবির রূপ বদলে দেওয়া যায়। এগুলো হলো প্রফেশনালদের দ্বারা তৈরি এডজাস্টমেন্ট।
ভালো এডিটিং অ্যাপে ফটোর জন্য আলাদা আলাদা ফিল্টার ও ইফেক্ট আগে থেকে তৈরি থাকে। - প্রফেশনাল এডিটিং টুলসঃ এইট টুলস গুলো এডভান্স লেভেলের এডিটিং ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন মাস্কিং, সিলেকশন টুল, কার্ভ এডজাস্টমেন্ট (curve), লেয়ার ইত্যাদি। এই অপশন গুলো ব্যবহার করে ছবির বিশেষ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
- দামঃ ভালো এডিটিং অ্যাপ এর দুটি ভার্সন থাকে, ফ্রি এবং পেইড। অনেক অ্যাপের ক্ষেত্রে ফ্রি ভার্সনে খুব কম ফিচারস থাকে। এ বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
আমরা এই উপরিউক্ত বিষয়গুলির উপর লক্ষ্য রেখে বেস্ট অ্যাপের লিস্ট তৈরি করেছি। তবে কিছু অ্যাপের মধ্যে এই সব গুণ নেই, আবার অন্য এক দিক থেকে তারা শ্রেষ্ঠ। তাই যুক্ত করতে বাধ্য হয়েছি।
আরও পড়ুনঃ
- 100+ ছবি এডিট করার পিকচার ও নিউ ব্যাকগ্রাউন্ড ফটো
- 6 টি ইউটিউব সম্পর্কে অজানা তথ্য | খুব কম লোক জানেন
- Ami Akhon Kothay Achi? কিভাবে দেখে গুগল ম্যাপে নিজের লোকেশন
7 টি বেস্ট ফটো এডিটিং অ্যাপস
এই লিস্টে যেসব অ্যাপগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাদের অফিসিয়াল প্লে স্টোর লিংক নিচে দেওয়া হয়েছে। Android ব্যবহারকারীদের জন্য প্লে স্টোর এবং IOS এর ক্ষেত্রে অ্যাপ স্টোর।
পুরনো এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু অ্যাপ চলতে সমস্যা দিতে পারে। তাই আপনার ফোনের এন্ড্রয়েড ভার্সন একবার চেক করে নিন।
7. Picture Editor / PixelLab (পিকচার এডিটর)
আগে এই অ্যাপটি PixelLab নামে অনেক পপুলার ছিলl। পরবর্তীতে নাম বদলে পিকচার এডিটর করা হয়। বেশিরভাগ ইউটিউবার যারা মোবাইল দিয়ে ভিডিও বানাতো, এই অ্যাপের মাধ্যমেই ভিডিও Thumbnail তৈরি করত। বর্তমানে বিভিন্ন থাম্বনেইল এডিটিং অ্যাপ আসার পর PixelLab এর খ্যাতি অনেকটা কমে গেছে।
এই অ্যাপটি ব্যবহার করা হয় লেখাভিত্তিক (Text based) ফটো এডিটিং এর জন্য। আপনি কি এমন কোন অ্যাপ খুঁজছেন যেখানে টাইপোগ্রাফি, লোগো ডিজাইন, থাম্বনেইল ডিজাইন, মিম, কোটস এসব তৈরি করতে পারবেন? তবে পিকচার এডিটর আপনার জন্য বেস্ট হবে।
এছাড়া পিকচার এডিটরের জন্য ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল আছে, যা অনুসরণ করে আপনি ইউনিক ডিজাইন বানাতে পারবেন।
Highlights
- টেক্সট ভিত্তিক ফটো এডিটিং এর জন্য বেস্ট
- 100 মিলিয়নের বেশি ইনস্টল
- 4.3 স্টার রেটিং
6. Remini (রিমিনি)
রিমিনি একটি অসাধারণ AI এর উপর ভিত্তি করা ছবি এডিটিং অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি একটি অস্পষ্ট ফটো কে ঠিক করতে পারবেন।
এই অ্যাপের AI টেকনোলজি দ্বারা আপনি খুব সহজে ছবির কালার, কনট্রাস্ট ও অন্যান্য এডজাস্টমেন্ট গুলো ঠিক করতে পারেন।
ফটো ইমপ্রুভমেন্টের পাশাপাশি, রিমিনি AI দ্বারা হাই কোয়ালিটি পোর্ট্রেট তৈরি করতে পারে। আজকাল এ ধরনের পোর্ট্রেট অনেক পপুলার, হয়তো আপনিও অনেককে প্রোফাইলে দেখেছেন!
Remini তে দুই ধরণের প্ল্যান রয়েছে ফ্রি এবং পেইড। ফ্রি ব্যবহারকারীদের জন্য ডেইলি এডিটিং এর ক্ষেত্রে লিমিট রয়েছে। অন্যদিকে সাবসক্রিম নিলে আনলিমিটেড ফটো এডিট করা যাবে।
Highlights
- AI দ্বারা তৈরি ছবির জন্য বেস্ট
- 100 মিলিয়নের বেশি ইনস্টল
- 4.4 স্টার রেটিং
5. Prisma (প্রিজমা)
প্রিজমা অনেক পপুলার তার অসাধারণ আর্ট ইফেক্ট ফিল্টারের জন্য। আপনি যদি ছবিতে কার্টুন বা পেইন্টিং এর ইফেক্ট ব্যবহার করতে চান তবে এর চেয়ে ভালো অপশন হয়তো নেই।
প্রিজমা প্রধানত ফোকাস করে আর্টিস্টিক ইফেক্ট এর উপর। তাই বলা হয় প্লিজমা দ্বারা সাধারণ ছবিকে মহান চিত্রশিল্পী পিকাসোর মত পেইন্টিং এ পরিবর্তন করা সম্ভব।
এই ফটো এডিটরে রয়েছে 500+ ফিল্টার ও ইফেক্ট, যা আপনি বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া প্রিজমা প্রতিদিন একটি নতুন ফটো ফিল্টার তাদের অ্যাপে যোগ করে। ফিল্টার গুলো ছবিতে এপ্লাই করার পর আপনি এদের কমবেশিও করতে পারেন।
Highlights
- আর্টিস্টিক ইফেক্টের জন্য বেস্ট
- 50 মিলিয়নের বেশি ইনস্টল
- 4.4 স্টার রেটিং
4. Canva (ক্যানভা)
ক্যানভা হল সবার জন্য একটি প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইনিং অ্যাপ। সবার জন্য কারণ, ডিজাইন সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকলেও ক্যানভা দ্বারা প্রফেশনাল ডিজাইন করা সম্ভব।
ক্যানভাতে রয়েছে প্রফেশনালদের দ্বারা তৈরি অসংখ্য গ্রাফিক্যাল টেমপ্লেট। যেমন – সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ব্যানার ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ইউটিউব থাম্বনেইল আরো বিভিন্ন ধরনের টেমপ্লেট।
এই টেমপ্লেটে থাকা ইনফরমেশন পরিবর্তন করে আপনি যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে অনেকে ক্যানভার সঠিক ব্যবহার দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং করে। এভাবে গ্রাফিক ডিজাইনিং সার্ভিস দিয়ে তারা প্রচুর টাকা উপার্জন করছে।
ক্যানভা আপনি ফ্রি ব্যবহার করতে পারেন। তবে তাদের সাবস্ক্রিপশন নিলে প্রিমিয়াম টেমপ্লেটগুলো ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যায়।
Highlights
- সহজে গ্রাফিক ডিজাইনিং এর জন্য বেস্ট
- 100 মিলিয়নের বেশি ইনস্টল
- 4.4 স্টার রেটিং
3. Lightroom (লাইটরুম)
লাইটরুম একটি প্রফেশনাল ফটো এডিটিং অ্যাপ। এটি এডোবি দ্বারা তৈরি, তাদের জন্য যারা মোবাইলে প্রফেশনালি ফটো এডিটিং করতে চায়।
সাধারণত লাইটরুম ব্যবহার করা হয় ছবির কালার, লাইট ও অন্যান্য অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে। উপরে উল্লেখিত প্রিজমার মত লাইটরুমে তেমন কোনো পেইন্টিং ইফেক্ট নেই বা গ্রাফিক ডিজাইন করা যায় না। তবে লাইটরুমের বিভিন্ন ফিচারের ব্যবহার করে আপনি একটি আকর্ষণীয় ও প্রফেশনাল ফটো এডিট করতে পারবেন।
লাইটরুমে ফটো এডিটিং এর জন্য অ্যাডভান্স লেভেলের প্রায় সব টুলস রয়েছে। এই টুলস গুলোর ব্যবহার করে আপনি ছবিকে ইচ্ছামত একটি টোন (Tone) দেওয়া যেতে পারে। তবে এসব শেখার জন্য অবশ্যই একটু সময় দিতে হবে।
Highlights
- প্রফেশনাল ফটো এডিটিং এর জন্য
- 100 মিলিয়নের বেশি ইনস্টল
- 4.4 স্টার রেটিং
2. Snapseed (স্ন্যাপসিড)
স্ন্যাপসিড মোবাইলের জন্য তৈরি একটি প্রফেশনাল ফটো এডিটিং অ্যাপ, যা গুগল দ্বারা ডেভলপ করা হয়েছে। এই অ্যাপটি Android ও IOS উভয় ডিভাইসের জন্যই উপস্থিত রয়েছে।
অ্যাডভান্স ফটো এডিটিং টুলস এর প্রায় সবই স্ন্যাপসিডে রয়েছে। তবে লাইকরুম থেকে উপরে রাখার কারণ স্ন্যাপসিডে সমস্ত ফিচার একদম ফ্রি।
এছাড়া স্ন্যাপসিড পপুলার তার সহজ ইউজার ইন্টারফেসের জন্য। তাই এডিটিং এর বিন্দুমাত্র আইডিয়া না থাকলেও স্ন্যাপসিডে এডিটিং করা অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় সহজ হবে।
Highlights
- সহজ ও ফ্রী প্রফেশনাল ফটো এডিটর
- 100 মিলিয়নের বেশি ইনস্টল
- 4.4 স্টার রেটিং
1. PicsArt (পিকস আর্ট)
PicsArt একটি বহুমুখী কাজে দক্ষ প্রফেশনাল ফটো এডিটিং অ্যাপ। তাই আমাদের লিস্টে সেরা এডিটর হিসেবে সবার শীর্ষে রাখা হয়েছে। আপনি পিকসআর্টকে Android – iOS উভয় ডিভাইসেই ব্যবহার করতে পারেন।
ফটো এডিটিং এর জন্য যেসব অ্যাডভান্স টুলস দরকার হয়, তার সবই পিকসআর্টে রয়েছে। এসব টুলস ব্যবহার করে ফটো এডিটিং এর পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইনিং ও করা যেতে পারে। হ্যাঁ, আপনি পিকসআর্টকে মোবাইলের ফটোশপ বলতে পারেন!
এসব টুলস ছাড়া পিকসআর্টে ফিল্টারেরও অভাব নেই। এর সাথে রয়েছে ইউজারদের বিশাল কমিউনিটি, যেখানে আপনি নিজের এডিটিং শেয়ার ও অন্যদেরটা এডিট করতে পারবেন। অনেক বেশি ইউজার হওয়ায় ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও রয়েছে। তাই চাইলে ইউটিউব থেকে খুব সহজে পিকসআর্ট এর ব্যবহার শিখতে পারেন।
বর্তমানে PicsArt ফ্রিতে অনেক কিছু অফার করে। তবে তাদের গোল্ড মেম্বারশিপ নিলে আরও বিশেষ কিছু ফিচার পাওয়া যাবে।
Highlights
- মোবাইলের জন্য অল ইন ওয়ান ফটো এডিটর
- 500 মিলিয়নের বেশি ইনস্টল
- 4.3 স্টার রেটিং
পরিশেষে
বর্তমানে মোবাইল ফোন টেকনোলজি অনেক বেশি উন্নত হলেও কম্পিউটারের থেকে শক্তিতে এখনো অনেক পিছিয়ে। তাই ফোনের ছবি এডিটিং অ্যাপ গুলোর মধ্যে কোন না কোন অভাব থেকেই যায়। আসলে এদের একটি বিশেষ কাজের জন্য তৈরি করা হয়, তাই টি নির্দিষ্ট কাজে বেস্ট বলা যেতে পারে। তাই আপনার সুবিধার্থে আমরা সাতটি বেস্ট ফটো এডিটকে এই লিস্টে উল্লেখ করেছি, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিন।
আপনার জন্য সেরা ফটো এডিটর কোনটি? কমেন্টে জানাবেন!