ইনকগনিটো মোড কি? Incognito Mode কেন ব্যবহার করা হয়

গুগল ক্রোম এর মত জনপ্রিয় প্রায় প্রতিটি ব্রাউজারে ইনকগনিটো মোড নামে একটি অপশন রয়েছে। তবে ফায়ারফক্স, সাফারি ও অন্যান্য কিছু ব্রাউজারে একে Private Mode বলা হয়।

এই প্রাইভেট বা ইনকগনিটো মোড কি? এর দ্বারা কি পরিচয় গোপন থাকে?

ইনকগনিটো মোড সম্বন্ধে আপনার যা ধারণা, তা হয়তো কিছুটা কাল্পনিক। কাজেই এই আর্টিকেলে খুব সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ইনকগনিটো মোড কি এবং ব্যবহারে কি কি সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।

ইনকগনিটো মোড কি?

শব্দকোষ অনুযায়ী ইনকগনিটো (Incognito) এর বাংলা অর্থ হল ছদ্মবেশী বা গুপ্তভাবে। অর্থটা কিছুটা ঠিক।

ছোট করে বলতে গেলে, ইনকগনিটো মোড হল একটি সাময়িক ব্রাউজার উইন্ডো। যদি আপনি ইনকগনিটো মোড চালু করে গুগল সার্চ করেন অথবা কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তবে আপনার সার্চ হিস্ট্রি, ব্রাউজার ক্যাশ, কুকিজ ইত্যাদি ব্রাউজারে সেভ হবে না। ব্রাউজার বন্ধ করার সাথেই তা অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যাবে।

আশা করি বুঝতে পারেননি! চলুন ব্যাপারটা একটু স্পষ্ট করে দেখা যাক।

কম্পিউটারে ইনকগনিটো মোড উইন্ডো খোলা হয়েছে। এখানে লেখা রয়েছে ইনকগনিটো মোড কি এবং এর দ্বারা কি হয়।
Incognito Tab খোলার পর যা দেখতে পাওয়া যায়।

উপরের ছবিটিতে গুগল ক্রম ইনকগনিটো ট্যাবের স্ক্রিনশট পেশ করা হয়েছে। এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, ইনকগনিটো মোড দ্বারা কি সম্ভব এবং এর সীমাবদ্ধতা।

এখানে বলা হয়েছে,

  • ব্রাউজিং হিস্ট্রি। অর্থাৎ কি সার্চ করছেন এবং কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন,
  • কুকিজ ও ব্রাউজার ক্যাশ ফাইল,
  • ওয়েবসাইট লগ ইন ডিটেইলস, ইত্যাদি

ইনকগনিটো উইন্ডো বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ব্রাউজার থেকে ডিলিট হয়ে যাবে।

এখানে আরো বলা হয়েছে, আপনি যেসব ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন তারা আপনার আইপি অ্যাড্রেস, লোকেশন ইত্যাদি দেখতে পাবে। অর্থাৎ আপনি তাদের কাছে গোপন থাকবেন না।

আরও পড়ুনঃ

তবে হ্যাঁ, ইনকগনিটো মোডে আপনি যদি কোন ফাইল সেভ অথবা কোন পেজকে বুক মার্ক করেন তবে তা স্টোরেজে সেভ থাকবে

এমতে বলা যায়, ইনকগনিটো মোড আমাদের গোপন তথ্য সেভ না করে ব্যবহার শেষে রিমুভ করে দেয়। তবে এটি আমাদের পরিচয় সমগ্র ইন্টারনেট থেকে গোপন করে না।

ইন্টারনেট থেকে নিজেকে গোপন করে রাখতে আপনি ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, ইনকগনিটো মোড কেন ব্যবহার করা হয়? এতে লাভ কি?

শুধু লাভ নয় কিছু সমস্যাও রয়েছে। চলুন দেখা যাক।

ইনকগনিটো মোড কেন ব্যবহার করা হয়? এর সুবিধা

ইনকগনিটো অপশনটিতে ক্লিক করলে একটি ডার্ক উইন্ডো খুলে যায়। আপনি কি কখনো ভাবতেন এটি শুধুমাত্র হ্যাকারদের জন্য?

তারাও নিশ্চয়ই ব্যবহার করেন, তবে এই অপশনটি সকলের জন্য।

man using google in incognito mode on hp laptop on table beside a table

সাধারণত ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করা হয় সার্চ হিস্ট্রিকে পরিষ্কার রাখার জন্য। মনে করুন আপনি অন্যের কম্পিউটারে ইনকগনিটো চালু করে একাধিক জিনিস সার্চ করলেন এবং ওয়েবসাইট লগইন করলেন। এক্ষেত্রে ইনকগনিটো বন্ধ করার সাথে ব্রাউজ হিস্ট্রি ডিলিট এবং ওয়েবসাইটগুলো থেকে লগ আউট হয়ে যাবে।

এবার ভাবুন, স্বাভাবিকভাবে সার্চ করলে আপনাকে হাতে করে ব্রাউজের হিস্ট্রি ক্লিয়ার এবং ওয়েবসাইট গুলো থেকে লগ আউট হতে হতো। কিন্তু ইনকগনিটো ফিচার এই কাজটি অনেক সহজ করে দেয়, এই তাই না?

এছাড়া এই প্রাইভেট মোড আরো অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন –

  1. একাধিক অ্যাকাউন্ট লগ ইনঃ যদি আপনি কোন ওয়েবসাইটে আগে থেকে লগইন থাকেন, তবে প্রথমে লগ আউট হতে হবে অন্য একাউন্ট লগইন করার জন্য। তা না করে আপনি ইনকগনিটো থেকে দ্বিতীয় একাউন্ট লগইন করতে পারেন।
  2. অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রেঃ অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট ইউজারদের ট্র্যাক করে এবং ইন্টারেস্ট অনুযায়ী জিনিসের দাম পরিবর্তন করে, আপনার জন্য তা কিছুটা বেশি দেখাতে পারে। তাই ইনকগনিটো থেকে দেখতে পারেন সে জিনিসের আসল দাম কত।
  3. ব্যক্তিগত ইন্টারেস্ট গোপন রাখতেঃ ইন্টারনেটে আমরা যা কিছু সার্চ করি, দেখি তার ট্র্যাক করা হয়। এর দ্বারা আমাদের ইন্টারেস্টেড বিষয়গুলি নিয়ে ধারিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমরা ADs দেখি। তাই নিজের ইন্টারেস্ট গোপন রাখতে প্রাইভেট মোড ব্যবহার করতে পারেন।
  4. ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর জন্যঃ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যখন আমরা কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করি, তখন ব্রাউজার সে ওয়েবসাইটের কিছু ফাইল ডাউনলোড করে নেয় এবং দ্বিতীয়বার ভিজিট করলে সে ফাইলগুলো ব্যবহার করে।

    যেহেতু ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট একটি দীর্ঘ পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া, এখানে ফাইলগুলি বারবার পরিবর্তিত হয়। কিন্তু ব্রাউজার স্টোর করা সেই প্রথমের ফাইলটি দেখায়। তাই ডেভলপাররা ফ্রেশ আপডেট দেখার জন্য পেজটিকে ইনকগনিটো মোডে খোলেন।

Incognito Mode কিভাবে ব্যাবহার করে?

ইনকগনিটো মোড দেখতে কিছুটা আলাদা কিন্তু ব্যবহারের পদ্ধতি স্বাভাবিক ব্রাউজিং এর মতই। এই ফিচার কম্পিউটার ও মোবাইলের প্রায় সব ব্রাউজারে রয়েছে। এখানে ব্যবহারের পদ্ধতি বর্ণনা করতে আমরা গুগল ক্রোম ব্রাউজার কাজে নিয়েছি।

মোবাইলে ইনকগনিটো মোড ব্যবহার

মোবাইলে এই প্রাইভেট মোড ব্যবহার করার জন্য একটি ব্রাউজার খুলুন। Android ব্যবহারকারীরা গুগল ক্রোম, এবং iOS ব্যবহারকারীরা Safari খুলতে পারেন।

মোবাইলে গুগল ক্রোমে ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করার অপশন
মোবাইলে গুগল ক্রোমে ইনকগনিটো মোড চালু করা হচ্ছে

এরপর উপরে ডান দিকে থ্রি ডট বাটনে ক্লিক করলে, Chrome Incognito Hat and glass Icon. New Incognito Tab অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করুন।

এই অপশনটিতে ক্লিক করার পর একটি নতুন উইন্ডো খুলে যাবে। এবার আপনি ফোনে ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজিং করতে পারেন।

আপনি জানেন?

ফোনে এই প্রাইভেট ব্রাউজিং মোড ব্যবহারকালীন স্ক্রিনশট নেওয়া যায় না। তবে কম্পিউটারে তা সম্ভব।

কম্পিউটারে ইনকগনিটো মোড ব্যবহার

কম্পিউটার PC তে প্রাইভেট ব্রাউজিং করার জন্য প্রথম একটি ব্রাউজার খুল

কম্পিউটার PC তে প্রাইভেট ব্রাউজিং করার জন্য প্রথম একটি ব্রাউজার খুলন। এখানে আমি গুগল ক্রোম ব্যবহার করছি, তবে আপনি ডিফল্ট Microsoft ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন

 গুগল ক্রোমে ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করার অপশন
কম্পিউটারে গুগল ক্রোমে ইনকগনিটো মোড চালু করা হচ্ছে

এরপর উপরে ডান দিকে থ্রি ডট বাটনে ক্লিক করলে, তৃতীয় নাম্বারে New Incognito Window অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করলে একটি নতুন উইন্ডো খুলে যাবে। এখানে আপনি গোপন হয়ে ব্রাউজিং করতে পারেন।

কম্পিউটারে ইনকগনিটো মোড এর শর্টকাট key রয়েছে। এর জন্য একসাথে Ctrl + Shift + N প্রেস করুন তাহলে ইনকগনিটো উইন্ডো খুলে যাবে। এই shortcut key দিয়ে ক্রোম, ফায়ার ফক্স, সাফারি যে কোন ব্রাউজারে প্রাইভেট উইন্ডো করা যাবে।

ব্রাউজার সাপোর্ট

এখানে ইনকগনিটো মোড সাপোর্ট করে এমন কিছু জনপ্রিয় ব্রাউজারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সে ব্রাউজারে এই ফিচার কে কি বলা হয় তাও পাশে দেওয়া রয়েছে।

ব্রাউজারসাপোর্টনাম
Google Chromeহ্যাঁIncognito Window
FireFoxহ্যাঁPrivate Window
Operaহ্যাঁPrivate Window
Safariহ্যাঁPrivate Browsing
Microsoft Edgeহ্যাঁInPrivate Window

উপরে উল্লেখিত ব্রাউজারগুলো ছাড়া আরো একাধিক ব্রাউজার রয়েছে যা এই প্রাইভেট ব্রাউজিং ফিচার সাপোর্ট করে।

পরিশেষে

ইনকগনিটো মোড তাদের জন্য খুবই উপযোগী যারা এর সঠিক ব্যবহার জানে। আশা করি দীর্ঘ আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনিও বুঝতে পেরেছেন ইনকগনিটো মোড কি এবং কি কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে একটি সমস্যাও রয়েছে, অনেক সময় প্রাইভেট ব্রাউজিং করা কালীন কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ভুল করে কোন ট্যাব বন্ধ করে দিলে তা আর রিস্টোর করা সম্ভব নয়।

এখনো কোনো প্রশ্ন রয়েছে? তাহলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। আর এটাও জানাবেন আপনি ইনকগনিটো ফিচারটি কিভাবে ব্যবহার করতে চলেছেন।

Photo of author
DK John
আমি একজন ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং বং জ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। তথ্যপ্রযুক্তি সম্বন্ধে নতুন কিছু জানতে আমার খুব ভালো লাগে, যা এই ব্লগের মাধ্যমে আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারি।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.