কিভাবে সঠিক ইন্টারনেট স্পিড চেক করে? ডাটা ও ওয়াইফাই

আপনি কোনদিন মোবাইল ডাটা বা ওয়াইফাই এর ইন্টারনেট স্পিড চেক করেছিলেন?

চলুন, স্পিড টেস্ট কিভাবে করে দেখা যাক।

অবশ্য অনেকের জন্য ইন্টারনেটের গতি টেস্ট করা অজানা থেকে বেরিয়ে আসা এক বিষয়। তাদের জন্য, হ্যাঁ আমরা কি পরিমান স্পিড পাচ্ছি তা চেক করা সম্ভব। এর জন্য কিছু ওয়েবসাইট ও অ্যাপ রয়েছে।

ইন্টারনেট স্পিড এর পরিমাণ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওয়াইফাই – ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীদের জন্য। কারণ ওয়াইফাই এর স্পিড অনুযায়ী প্ল্যান গুলোর দাম হয়। হতেই পারে আপনার থেকে বেশি দাম নিয়ে কম স্পিড দেওয়া হচ্ছে!

অন্যদিকে মোবাইল ডাটা ব্যবহারকারীরা স্পিড টেস্টের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে পারবে তাদের এলাকার সবচেয়ে দ্রুত নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার(SIM) কোনটি। তাছাড়া আমার ইন্টারনেট স্পিড কত? এই প্রশ্নেরও উত্তর পেয়ে যাবেন।

ইন্টারনেট স্পিড টেস্টের আগে করণীয়

আপনার ইন্টারনেটের স্প্রিড বিভিন্ন বিষয়ে দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে । তাই নির্ভুল স্পিড টেস্টের রেজাল্ট পেতে, আগে এই বিষয়গুলিকে নিশ্চিত করুন।

  1. স্পিড টেস্ট করার আগে আপনার ফোন বা কম্পিউটারে খুলে রাখা অন্যান্য অ্যাপ গুলোকে বন্ধ করুন। ফলে অ্যাপ গুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে আর ডেটা খরচ করবে না।
  2. কোন ধরনের ডাউনলোড বা আপডেট চালু থাকলে সাময়িকভাবে বন্ধ করুন।
  3. খুব ভালো হয় ডিভাইসটিকে Restart করে স্পিড টেস্ট করলে।
  4. ওয়াইফাই ব্যবহারকারীরা, ওয়াইফাই এর সাথে কানেক্ট থাকা অন্যান্য ডিভাইস গুলোকে ডিসকানেক্ট করুন।
  5. ওয়াইফাই এর সঠিক ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করার জন্য ইথারনেট তার দিয়ে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কানেক্ট করুন। ওয়ারলেস কানেক্ট এর ক্ষেত্রে সামান্য সিগন্যাল লস হতে পারে।
  6. স্পিড টেস্টের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অ্যাপ ব্যবহার করুন। নিচে এ বিষয়েই উল্লেখ করা হয়েছে।

ইন্টারনেট স্পিড চেক করার পদ্ধতি – মোবাইল ডাটা ও ওয়াইফাই

আপনার ইন্টারনেটের গতি যাচাই করার জন্য একাধিক অ্যাপস ও ওয়েবসাইট রয়েছে। এদের মধ্যে ওকলা (Ookla) -কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়। এছাড়া গুগল ও অন্যান্য অনেক টুলস রয়েছে।

মনে রাখবেন, এই টুলস গুলোতে ইন্টারনেট স্পিডকে Mbps (Mega Bits Per Second) হিসেবে ধরা হয়। নিচে কিছু নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট স্পিড চেক করার টুলস উল্লেখ করা হয়েছেঃ

1. ওকলা (Ookla) – SpeedTest.Net

ওকলা ইন্টারনেট স্পিড চেক করার ক্ষেত্রে একটি পপুল টুল। এখানে আপনি ডাউনলোড-আপলোড স্পিড, পিং রেট, সার্ভার লোকেশন সবকিছু খুঁটিনাটি দেখতে পাবেন। এমনকি সার্ভার পরিবর্তন করে টেস্ট করা যায়।

স্পিড টেস্ট করার জন্য ওকলা ওয়েবসাইট বা অ্যাপ খুলে GO বোতামে ক্লিক করুন, তাতেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।

ওকলা ওয়েব সাইট PC তে ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড চেক

এই অ্যাপের একটি আকর্ষণীয় ফিচার হল “Speed Global Index“। এখানে আপনি বিশ্বে ইন্টারনেট স্পিডের মধ্যে আপনার দেশের রাঙ্কিং দেখতে পাবেন। এছাড়া সবার সাথে নিজের স্পিডের তুলনা করে দেখুন কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে আছেন।

Speedtest.net -এর অ্যাকাউন্ট খুললে স্পিড হিস্ট্রি ও আরো কিছু ফিচার পাওয়া যাবে। ওকলা ওয়েবসাইট ছাড়া Android, iOS, Windows, Mac এর জন্যেও উপলব্ধ রয়েছে।

2. Fast Speed Test – Fast.Com

fast.com একটি সাধারণ ইন্টারনেট স্পিড টেস্টিং টুল, যা Netflix দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এর দুটি ভালো গুণ রয়েছে, কোনো অ্যাড নেই এবং ব্যবহার খুব সহজ

fast.com ওয়েবসাইটে ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট ও চেক

স্পিড টেস্ট শুরু করার জন্য আপনাকে কিছু করতে হবে না। খুলতেই অটোমেটিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। রেজাল্ট আসার পর, তা ছবি আকারে ফেসবুক ও টুইটারে শেয়ার করার জন্য বোতাম দেওয়া রয়েছে।

এছাড়া Android iOS ব্যবহারকারীদের জন্য fast.com এর অ্যাপ রয়েছে।

3. গুগল সার্চ স্পিড চেক (Google)

উপরিউক্ত অ্যাপ ছাড়া, গুগলের মধ্যেও ইন্টারনেট স্পিড চেক করার ফিচার রয়েছে। এখানে আপনার ইন্টারনেট স্পিড সমন্ধে ডিটেলস ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন।

গুগল সার্চ এর মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট ও চেক
বাঁদিকে গুগলে সার্চ করার পর স্পিড টেস্ট অপশন। ডান দিকে স্পিড টেস্ট এর রেজাল্ট।

যদি আপনি গুগলে সার্চ করেন “Internet Speed Test” তবে প্রথমেই স্পিড টেস্ট করার একটি অপশন পাবেন। এখানে আপনি ডাউনলোড-আপলোড স্পিড, পিং রেট ও অন্যান্য সব ইনফরমেশন দেখতে পাবেন।

গুগলের এই ফিচার মোবাইল ও কম্পিউটার উভয় ডিভাইসের জন্য উপলব্ধ। এর জন্য কোন অ্যাপ ডাউনলোড করার দরকার নেই। শুধুমাত্র Google এ গিয়ে সার্চ করুন “Internet Speed Test”, তা হলেই চলে আসবে।

আরও পড়ুনঃ

Mbps এবং MBps এর মধ্যে পার্থক্য কি?

Mbps বলতে বোঝায় “Megabits per second” এবং MBps এর পূর্ণরূপ হল “Megabytes per second”। পার্থক্য শুধুমাত্র Bit এবং Byte এর।

8 বিট (bit) -এ হয় 1 বাইট (byte)। সাইজের দিক থেকে বলতে গেলে bit এর চেয়ে byte আট গুন বড়, যেমন MB থেকে GB।

এ বিষয়ে আপনার জানা প্রয়োজন, কারণ ইন্টারনেট স্পিড চেক করার ক্ষেত্রে স্পিডকে Mbps হিসেবে দেখানো হয়। অন্যদিকে আমরা যখন কিছু ডাউনলোড করি, সেটি হল MBps স্পিড। তাই স্পিড টেস্টে আসা রেজাল্ট বাস্তব স্পিড থেকে বেশি মনে হয়।

আপনার স্পিড টেস্টের রেজাল্টকে ডাউনলোড স্পিডে কনভার্ট করতে আট (8) দিয়ে ভাগ করুন।

ইন্টারনেট স্পিড এর পিং কি? (What is Ping)

ইন্টারনেট স্পিডের ক্ষেত্রে পিং বলতে বোঝায় ডাটা প্রসেসিং এর গতিকে। অর্থাৎ কত তাড়াতাড়ি ডেটা আপনার কম্পিউটার থেকে সার্ভারে যাচ্ছে এবং সেখান থেকে রেসপন্স ফিরে আসছে।

মনে করুন, শিক্ষক একটি ছাত্রকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল, এরপর সে ছাত্র উত্তর দিল। এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা ও উত্তর দিতে যে সময় লাগলো, সেটা হলো পিং টাইম।

কম্পিউটারের পিং হিসেব করা হয় মিলি সেকেন্ডে (1000ms = 1 sec)। পিং টাইম যত কম হবে আপনার ইন্টারনেট তত স্মুথ ও রেস্পন্সিভ। সাধারণত 100ms এর নিচে পিং গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়।

পরিশেষে

ইন্টারনেটের স্পিড চেক করার জন্য অনেক মাধ্যম রয়েছে, তাদের মধ্যে সেরা ও বিশ্বাসযোগ্য তিনটি পদ্ধতি এই আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি এই টেস্ট দিনের-রাত্রের বিভিন্ন সময়ে করে দেখতে পারেন, এতে বুঝতে পারবেন কখন স্পিড বেশি ও কম পাওয়া যায়। হিহিহিহিহি

আশা করি স্পিড টেস্ট কিভাবে করতে হয় তার পাশাপাশি নতুন কিছু শিখেছেন। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।

Photo of author
DK John
আমি একজন ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং বং জ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। তথ্যপ্রযুক্তি সম্বন্ধে নতুন কিছু জানতে আমার খুব ভালো লাগে, যা এই ব্লগের মাধ্যমে আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারি।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.